রবিবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০১০

রাবি শিক্ষক অনিন্দ্য’র আত্মরক্ষায় কৌশল


Sunday, 26 December 2010

আহসান হাবীব অপু, রাজশাহী থেকে: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রভাষক মাহবুর রহমান অনিন্দ্যর বিরুদ্ধে তার স্ত্রী কলেজ পড়ুয়া সালমা জাহান যৌতুক ও নির্যাতনের মামলা করার দু’দিন পরও মামলার তেমন কোন অগ্রগতি হয়নি
মতিহার থানার ওসি জানান, মামলার নতুন কোন অগ্রগতি নেই, তদন্ত চলছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও এ বিষয়ে কোন পদক্ষেপ নেয়নি সালমা জাহান জানিয়েছেন, এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে তার সঙ্গে যোগাযোগও করা হচ্ছে না তার অভিযোগ- বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অনিন্দ্যর পক্ষ নিয়েছে বলেই হয়তো আমার সঙ্গে একবার যোগাযোগেরও প্রয়োজন মনে করছে না কুড়িগ্রাম থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছুটে গিয়েও স্বামীর ঘরে জায়গা না হওয়ায় সালমা জাহানকে বুধবার দিবাগত রাত কাটাতে হয় অনিন্দ্যর ঘরের বারান্দায় এতে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন শেষ পর্যন্ত বৃহস্পতিবার রাতে স্বামীর বিরুদ্ধে যৌতুকের জন্য নির্যাতনের অভিযোগে নগরীর মতিহার থানায় মামলা করেন এদিকে, দু’দিন সাংবাদিকদের সামনে কোন কথা না বললেও শুক্রবার ই-মেইল বার্তা পাঠিয়ে অনিন্দ্য দাবি করেছেন, তার স্ত্রী সালমাকে তিনি গত ১২ই ডিসেম্বর ডাকযোগে তালাকনামা পাঠিয়েছেন সালমার চরিত্র সম্পর্কেও তিনি কটূক্তি করেছেন
গত ৫ই জুন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রভাষক কুড়িগ্রামের পাটেশ্বরী বাজার এলাকার মাহবুবুর রহমান অনিন্দ্যর সঙ্গে একই জেলার কুমরপুর হাজিরঘাট এলাকার আবদুস সালামের মেয়ে সালমা জাহানের বিয়ে হয় এর দু’দিন পরই অনিন্দ্য চলে আসেন রাজশাহী সালমা জানান, রাজশাহী ফিরে আসার পর থেকেই অনিন্দ্য তাকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেন ‘নিয়ে আসবো-আসবো’ বললেও রাজশাহীতে তিনি নিয়ে আসেননি এরপর তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চাইলেও শিক্ষক অনিন্দ্য তাকে নিষেধ করেন তিনি বলেন, কি দরকার রাজশাহীতে ভর্তি হওয়ার? এমনকি ডিগ্রি পাস করারও দরকার নেই এদিকে, দিনের পর দিন এড়িয়ে চলায় দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েন সালমা জাহান তিনি বাধ্য হয়ে বুধবার গ্রাম থেকে চলে আসেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যাম্পাসে এসে তার চাচাতো ভাই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এমএ আজিজ নয়নকে সঙ্গে নিয়ে বুধবার রাত ১০টার দিকে যান রাবি’র জুবেরী ভবনের ৩২৯ নম্বর কক্ষে চলে যেতে বলেন তাকে এ নিয়ে অনিন্দ্য তার স্ত্রীর চাচাতো ভাইয়ের ওপর ক্ষিপ্ত হন তার ঘর চিনিয়ে দেয়ার জন্য এরপর সালমার ওপরও চালানো হয় নির্যাতন সালমা জাহান জানান, আমার চাচাতো ভাইকে বের করে দেয়ার পরই আমাকে মারধর শুরু করে অনিন্দ্য একপর্যায়ে পাশের ৩২৮ নম্বর কক্ষ থেকেও আরেকজন শিক্ষক এসে আমাকে পিটিয়েছে সারারাত আর ঘরে আসেনি এদিকে, স্বামীর ঘর থেকে বের করে দেয়ায় কনকনে শীতের মাঝে সারারাত সালমাকে কাটাতে হয়েছে খোলা বারান্দায় অবর্ণনীয় কষ্টের মধ্যে রাত কাটে তার বৃহস্পতিবার দুপুরে সালমা অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয় সালমার চাচাতো ভাই নয়ন জানান, এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় সালমা জাহান পাস করেছেন স্ত্রীকে দেখেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন অনিন্দ্য নয়ন জানান, তিনি আমাকে ধাক্কা দিয়ে ঘর থেকে বের করে দেন দু’জনে মিলে আমাকে ঘর থেকে বের করে দিয়ে ঘরে তালা দিয়ে চলে যায় অনিন্দ্য

স্ত্রীর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের এই আচরণকে অমানবিক বলে আখ্যায়িত করেছেন শিক্ষকরা এটা শিক্ষক সমাজের জন্য লজ্জাজনক বলেন অনেকেই সেই সঙ্গে রাবি মহিলা পরিষদ এ ঘটনার জন্য শিক্ষকের শাস্তি দাবি করেছেন সংগঠনের সহ-সাধারণ সম্পাদক ড. তানজিমা ইয়াসমিন বলেন, এটা কোনভাবেই সমর্থনযোগ্য নয় একটা মেয়েকে সারারাত শীতের মধ্যে ফেলে রেখে শিক্ষক অনিন্দ্য অবশ্যই মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছেন তিনি জানান, নির্যাতিত সালমাকে আমরা সব ধরনের সহায়তা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি বৃহস্পতিবার রাতে সালমা মতিহার থানায় গিয়ে তার স্বামী অনিন্দ্যর বিরুদ্ধে যৌতুক দাবি ও নির্যাতনের অভিযোগে মামলা দায়ের করেন এদিকে, রাবি শিক্ষক অনিন্দ্য ই-মেইলে সাংবাদিকদের কাছে একটি বার্তা পাঠিয়ে দাবি করেন, আমি সালমাকে গত ১২ই ডিসেম্বর আইনি সকল নিয়ম মেনে তালাক দিই বিয়ের পর তার সঙ্গে আমার কোন শারীরিক সম্পর্কও কখনও স্থাপন করিনি আইনি প্রক্রিয়ার তালাকের কাগজপত্র সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং সালমা জাহানের বরাবর রেজিস্ট্রি ডাকযোগে প্রাপ্তি স্বীকারপত্রসহ পাঠালেও সে তা না গ্রহণ করে ফেরত পাঠায় কিন্তু সংশ্লিষ্ট স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে তা সংরক্ষিত আছে পরে সালমা জাহান গত ২০শে ডিসেম্বর আমার বিরুদ্ধে কুড়িগ্রাম জেলা আদালতে যৌতুকের মামলা দায়ের করে যা আদালতে এখনও বিচারাধীন মাহবুর রহমান অনিন্দ্য মেইল বার্তায় তার স্ত্রীর চরিত্র নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তার এসব বক্তব্যকে মিথ্যা দাবি করে গতকাল সালমা জানান, আমার সম্পর্কে তিনি কটূক্তি করে আমাকে সমাজের কাছে খারাপ করতে চাইছেন আমার কোন চাওয়া নেই একটাই চাওয়া- আমি যাতে সুবিচার পাই একজন শিক্ষক হয়ে তিনি বুধবার রাতে এবং এর আগে যে আচরণ করেছেন তা কোন সভ্য সমাজে মেনে নেয়া যায় না তিনি দাবি করেন, বিয়ের পর আমার সঙ্গে ওর ভাল সম্পর্কই ছিল কিন্তু রাজশাহী আসার পর থেকেই ও বদলে যায়

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন